সাদা ফুলের গন্ধ বেশি হয় ।সাদা রঙের ফুল কখন ফোটে।
মানব জীবনে দূর্বা ঘাসের অবদান সাদা ফুলের গন্ধ বেশি হয়। পৃথিবীতে যত ফুল রয়েছে তার সিংহ ভাগই বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে।সে গুলোর মধ্যে সাদা রঙের ফুল নগন্য। পৃথিবীর চিরায়ত নিয়মের মতো অন্যকে আকর্ষণ করার নিমিত্তে কোন কোন ফুল তার রূপ ও রঙের পসরা সাজিয়ে রেখেছে।
আবার কোনটি গাঁয়ে তীব্র সুবাস মেখে অন্যের চিত্ত আকর্ষণ করে চলেছে।রঙ্গিন ফুল দূর থেকেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করলেও এই ফুলগুলোতে তেমন গন্ধ বা সুবাস পাওয়া যায়না।অন্যদিকে সাদা ফুলের চারপাশে মিষ্টি স্নিগ্ধ সুবাসে কেমন আবেশ তৈরি করে।
ফুলের কীট পতঙ্গ আকৃষ্ট করার ভিন্ন উপায়
আমাদের চারপাশে হরেক রঙের ফুল দেখতে পাওয়া যায়।তার মধ্যে বেশির ভাগই রঙ্গিন হলেও কিছু ফুল রয়েছে সাদা রঙ্গের।আপনি কি কখনও খেয়াল করে দেখেছেন,রঙ্গিন ফুলের থেকে সাদা রঙের ফুলের গন্ধ অনেক বেশি? এর কারণ কি?আমাদের অনেকের মধ্যেই এমন প্রশ্ন দেখা দেয়।কিন্তু সবাই এর সঠিক কারন জানিনা।আসুন আমরা এর সঠিক কারণ জানার চেষ্টা করী।
প্রাকৃতিক ভাবেই এর সহজ এবং যুক্তিসঙ্গত উত্তর পাওয়া যায়। কথায় বলে প্রথমে দর্শনধারী পরে গুন বিচারি। মানুষ সুন্দরের পুজারি।লাল,নীল সবুজ, হলুদ সহ বিভিন্ন রঙ্গিন ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে অনেক কীট পতঙ্গ ফুলের আকর্ষণে ছুটে ছুটে আসে।
বিশেষ করে বিভিন্ন উপকারী মাছি, মৌমাছি ও উপকারী কীট উড়ে এসে ফুলের উপর বসে,ফুলের মধু সংগ্রহ করে।এভাবে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে গমনের মাধ্যমে এক ফুলের পরাগ রেণু অন্য ফুলের পরাগ রেনুর মাঝে সঞ্চারিত হয়,ফলে পরাগায়ন ঘটে এবং বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে সাদা রঙের ফুল রঙ্গিন ফুলের সৌন্দর্যের সাথে টেক্কা দিতে পারেনা।তাহলে উপায়?সাদা ফুলেরও বংশ বিস্তারের প্রয়োজন রয়েছে।সেক্ষেত্রে যদি কোন কীট পতঙ্গকে তার দিকে টেনে আনতে না পারে তবে সেই ফুলের পরাগায়ন হবেনা।বংশ বিস্তারও থেমে থাকবে।এভাবে চলতে থাকলে এক সমস্য সাদা ফুল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।এ থেকে উত্তরনের উপায় কি
আরও পড়ুনঃ ভালো তরমুজ চেনার উপায় কি
সাদা ফুলে গন্ধ বেশি হয়
সত্যি প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে মত্ত। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য তার কিছু নিজস্ব নিয়ম আছে।তার একটি হল সাদা রঙের ফুলে গন্ধ বেশি হয়। যেহেতু আকর্ষণীয় রঙের জন্য হরেক রঙ্গিন ফুলের সাথে তাকে প্রতিযোগিতা করতে হয় তাই সাদা রঙের ফুলে তীব্র সুবাস বিদ্যমান।এই ঘ্রানে মাতোয়ারা হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে কীট পতঙ্গ উড়ে এসে বসে সাদা ফুলে।
আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাব,রঙ্গিন ফুলে যেমন সৌন্দর্য প্রকাশ পায় তেমনি এর ঘ্রান কিন্তু ততোটা তীব্র নয়। কোন কোন রঙ্গিন ফুলে কোন গন্ধই থাকেনা।অন্যদিকে সাদা ফুলের ঘ্রানে আশেপাশের পরিবেশটাই পালটে যায়।
সাদা ফুল কখন ফোটে
দিনে রঙ্গিন ফুল তার রূপের পসরা সাজিয়ে বসে।রঙ্গিন ফুল সাধারণত বেশির ভাগ দিনেই ফোটে।অন্যদিকে সাদা ফুলগুলো রাতে ফোটে।কারন রাতের আঁধারে কীট পতঙ্গ ফুলের রঙ বুঝতে পারেনা।এই সুযোগটাই কাজে লাগায় সাদা ফুল গুল।এই সময় সাদা ফুল তার ভেতরের সবটুকু নির্যাস বিলিয়ে দেয় প্রকৃতিতে। ফলে আশেপাশের কীট পতঙ্গ ফুলের সুবাসে মাতোয়ারা হয়ে সাদা ফুলের মধ্যে এসে বসে।ফলে পরাগায়ন ঘটে।
কয়েকটি সাদা ফুলের নাম
রজনিগন্ধা
গন্ধরাজ
বেলি
জুই
যূথী
কামিনী
চাঁপা
শিউলী
টগর
উপরে উল্লেখিত ফুলের রঙ সাদা।এই ফুলগুলি রাতের আঁধারে চুপিসারে ফোটে,এবং দিনের বেলা ঝরে পড়ে। অন্যদিকে আমরা দেখি দেখতে ভীষণ সুন্দর অপরাজিতা, গাদা, ডালিয়া ইত্যাদি ফুলে কোন গন্ধ নেই বললেই চলে।ফুলের রানি গোলাপে খুব সামান্য পরিমাণে ঘ্রানের উপস্থিতি রয়েছে।
সুগন্ধি তৈরিতে সাদা ফুলের ব্যবহার
আমরা যে সব সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করে থাকি সেগুলো তৈরিতে সাদা বিভিন্ন ফুলের নির্যাস ব্যবহার করা হয়। সাদা ফুলের সুগন্ধে মাতোয়ারা গোটা বিশ।এই ফুল গুলো থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধাপে কালচারের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী সুগন্ধি উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
সাদা ফুলের নানান রকম ব্যবহার
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাড়ি ঘর ফুল দিয়ে সাজানো হয়। বিভিন্ন রঙ্গিন ফুলের পাশাপাশি সাদা ফুলের সাজ চোখে পড়ার মত। সাদা ফুলের গন্ধ বেশি হয়।সাদা ফুলের ব্যবহারে পরিবেশ বেশ স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে।তার মধ্যে সাদা ফুল বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। পূজার থালাতে,পূজা অর্চনাতেও সুগন্ধি ফুলের কদর রয়েছে।
মেয়েদের সাজের এক বিশেষ অনুষঙ্গ হলো ফুল। বিশেষ করে মেয়েরা খোঁপা সাজাতে ফুলের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে বেলি ফুলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।
ফুলের মালা বা তোড়া সাজাতে রঙ্গিন ফুলের সাথে সাদা ফুলের মিশ্রণে অপূর্ব সুন্দর দেখায়।অতিথি বরণে রজনীগন্ধার ব্যবহার অন্য সবকিছুর উপরে।
আরও পড়ুনঃ প্রতি সপ্তাহে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করুন
সাদা রঙের ফুল কোন ঋতুতে ফোটে
অন্যান্য ফুলের মতো সাদা ফুলের গাছ লাগানোর নিয়ম একই রকম। সাধারণত শীত কালে আমাদের দেশে ফুলের গাছ গুলি লাগানো হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ফুল শীত মৌসুম ছাড়াও অন্য মৌসুমে ও পাওয়া যায়। যেমন বেলি ফুল শীতে ফুটলেও বর্ষাতেও এর দেখা মেলে।রজনিগন্ধা প্রায় সারা বছর চাষ করা হয়।
তবে জুঁই ফুল শীতের পাশাপাশি বর্ষাতেও ফোটে।আবার কামিনি ফুলের সুবাসে বর্ষার সময়েও মন আকুল হয়ে ওঠে। অন্যদিকে টগর প্রায় সব ঋতুতেই পাওয়া যায়।
তবে এইগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম হল শিউলী ফুল।এই ফুল শুধুমাত্র ঋতুর রানি শরৎকালেই ফোটে। শরতের স্নিগ্ধতা আর শিউলীর পাগল করা রূপ ও সুগন্ধে মহনীয় পরিবেশের আবির্ভাব ঘটে। সাদা ফুলের গন্ধ বেশি হয়।
সাদা ফুলের সুগন্ধিতে বিরূপ প্রভাব
অনেকে মনে করেন সাদা ফুলের গন্ধ বেশি হওয়ার জন্য অনেক বিষাক্ত কীট পতঙ্গ ,সরীসৃপ এর উপদ্রব বেড়ে যায়। মানুষের জন্য যা অত্যন্ত ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে রাতের বেলা সুগন্ধি ফুলের আশেপাশে সাপের আনাগোনা বেড়ে যায়।এই ব্যাপারে আমাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
আবার বিভিন্ন ক্ষতিকর কীটের আক্রমণে ফুলে ছত্রাক আক্রমন করতে পারে। তাতে ফুল দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। অনেক সময় গাছ অকালে শুকিয়ে যায়।
শেষ কথাউপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, সাদা ফুলের গন্ধ বেশি এবং দেখতেও দারুন।সাদা পবিত্রতার প্রতীক। হাজার রঙ্গিন ফুলের মাঝেও আলাদা জায়গা দখল করে রেখেছে সাদা ফুল।কম বেশি সবাই সাদা ফুলের মহনীয় রূপের কাছে হার মানে। তাই আসুন পরিবেশকে আরও সুন্দর করতে বেশি বেশি সাদা সুগন্ধি ফুলের গাছ লাগাই।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url