ভালো তরমুজ চেনার উপায় কি।তরমুজের গুনাগুন ও উপকারিতা।
প্রতি সপ্তাহে ৪০০০ টাকা আয় করুন বাজার এখন তরমুজে সয়লাব। অতি পুষ্টিগুণে ভরপুর রসালো মিষ্টি ফলটি মন ও শরীর জুড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।এই তীব্র গরমে পানিশূন্যতা দূর করে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।
এত এত তরমুজের ভিড়ে ভালো তরমুজ চিনে নিতে হবে। তরমুজের আসল স্বাদ পেতে হলে ভালো তরমুজ চেনার বিকল্প নেই। সুতরাং আসুন জেনে নিই ভালো তরমুজ চেনার কতগুলো উপায়।
পোস্ট সুচিপত্রঃবাইরের রং দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। চকচকে উজ্জ্বল রং এর তরমুজগুলো হয় কাঁচা। পাকা তরমুজের রং গাড় ও কালচে হয়ে থাকে।
আকার অনুযায়ী তরমুজ ভারী হলে সেটি পাকা ও রসালো হয়ে থাকে।
তরমুজের গায়ে টোকা দিয়ে দেখুন এটি টনটন করলে বুঝবেন তরমুজ টি পাকা এবং ভালো।
বেশিদিন জমিতে তরমুজ থাকলে তার একপাশে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। হলুদ দাগ বেশি বা বড় হলে বুঝতে হবে তরমুজটি পাকা ও সুস্বাদু।
তরমুজের বোটা দেখতে শুকনো হলে বুঝবো সেটি পাকা।
অস্বাভাবিক বা এবড়ো থেবড়ো আকৃতির তরমুজ না কেনাই ভালো। কেননা কোন ঘাটতির কারণে এর আকৃতি স্বাভাবিক নয়। স্বাভাবিক বা গোলাকৃতি তরমুজ নির্বাচন করুন।.
তরমুজ কেনার সময় তা কেটে নিয়ে দেখে নিতে পারেন।
ভালো তরমুজের গুনাগুন
আমি কেন হীনমন্যতায় ভুগিঃ মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ হলো পানি। তরমুজ শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে, পানি শূন্যতা রোধ করে।
শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। এতে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম থাকে। যেমন- প্রতি ১৫২ গ্রাম তরমুজে মাত্র ৪৬ ক্যালোরি থাকে। কার্বোহাইড্রেট থাকে ১১ গ্রাম। এতে আঁশ রয়েছে দশমিক ৬ গ্রাম, চিনির পরিমাণ ৯ দশমিক ৪ গ্রাম, দশমিক ৯ গ্রাম প্রোটিন ও দশমিক ২ গ্রাম ফ্যাট।
তরমুজে সিট্রলিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারি।
লাইকপেন ও কিউকারবিটাসিন ই নামক উপাদানের জন্য এটি ক্যান্সার বিরোধী ভূমিকা রাখে। লাইকপেন মলদ্বারের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।
তরমুজে বিদ্যমান কিউকার বিটাসিন ই ক্যান্সার যুক্ত কোষ গুলোকে অপসারণ করে টিউমারের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়।ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এটি দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
তরমুজে থাকা ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন এ ত্বকে নতুন কোষ গজানোর সাথে কোষের ক্ষতিপূরণে সহায়তা করে।
তরমুজে প্রচুর পানি ও কিছু পরিমাণে আঁশ থাকে, যা হজম শক্তিকে ত্বরান্বিত করে । আঁশ মল স্বাভাবিক রাখে অন্যদিকে পানি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়।
তরমুজের নানাবিধ ব্যবহার
তরমুজ শুধুমাত্র শরীর ভালো রাখতেই নয়, আরো বেশ কিছু কারণে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। তার মধ্যে একটি হল রূপ চর্চা বা ত্বকের যত্নে তরমুজের বহুবিধ ব্যবহার। গরমে ত্বকের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। এই গরমে বাজারের প্রসাধনী এড়িয়ে চলাই উত্তম। কেননা বাজারের প্রসাধনীতে প্রচুর কেমিক্যাল রয়েছে যা ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
অন্যদিকে গরমে তরমুজ দিয়ে রূপচর্চা হতে পারে ত্বকের জন্য অমৃত। চলুন জেনে নিই তরমুজ দিয়ে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
রোদ থেকে এসে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিব। এরপর এক টুকরো তরমুজ হাতে নিয়ে মুখে ঘষে নেব। এতে ত্বকে রোদে পোড়া ভাব কমে যাব...ত্বক আর্দ্র হবে।
তরমুজের সাথে টক দই মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নিন ।সাথে কয়েক ফোটা মধু যোগ করে নিন। এটি ত্বকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে নিন ।দেখবেন ত্বক হবে উজ্জ্বল।
তরমুজের সাথে টমেটোর মিশ্রণে পাবেন বাড়তি সুবিধা। তৈলাক্ত ত্বকে এটি ভীষণ কার্যকর। মুখের লোম পরিষ্কার রাখতে এই প্যাক ভীষণ উপকারী।
এক কাপ তরমুজের সাথে দুটি পাকা কলা মিশিয়ে নিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এটি রোদে পোড়া ভাব কমাতে সেই সাথে টানটান ও মসৃণ করতে সহায়তা করবে।
যাদের ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক তাদের জন্য ম্যাজিকের মতো কাজ করবে তর তরমুজ। তরমুজের ভেতরের সাদা অংশে মধু মিশিয়ে ধীরে ধীরে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ত্বকের পোড়া ভাব কমবে, সাথে ত্বকে জ্বালা পোড়া হবে না।
তরমুজের বিচি ত্বকের স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কৈলাক্ত ত্বকের জন্য সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নেয়া যাবে।
তরমুজের রস ছেকে নিয়ে চুলায় ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তরমুজের রসের সাথে হাফ কাপ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও গোলাপ জল মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। রোদে থেকে এসে এটি ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে।
তরমুজ কখন, কোথায় পাবো
তরমুজ গ্রীষ্মকালীন ফল। প্রচন্ড তাপদাহে যখন মানুষের অষ্ঠাগত অবস্থা, তখন তরমুজ যেন তৃষ্ণা মেটাতে অমৃত হয়ে দেখা দেয়। বাংলাদেশের গ্রামের কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হল তরমুজ। কৃষক রোদে পুড়ে ,বৃষ্টিতে ভিজে তরমুজের চাষ করে থাকে।
এই তরমুজ যখন খাওয়ার উপযোগী হয় তখন জমি থেকে তুলেই বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন হাত বদলের মাধ্যমে তা ভোক্তা পর্যায়ে আসলে আমরা সেটি ভোগ করতে পারি। বাংলাদেশের শুধু গ্রামে গঞ্জেই নয় শহরের অলিতে গলিতে মিলছে তরমুজ।
তরমুজের দরদাম
তরমুজের আকৃতি রকম ভেদে এবং এলাকাভিত্তিক পাইকারি ও খুচরা মূল্যে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে তরমুজের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এই সময় তরমুজের প্রচুর চাহিদা থাকার জন্য দাম বেশ চড়া। চাহিদা কমে গেলে দাম কমে আসে।
শরবতে তরমুজের চাহিদা
প্রচন্ড গরমে তরমুজের চাহিদা বেশ বেড়ে গেছে। কেননা এতে রয়েছে শতকরা ৯২ ভাগ পানি। তরমুজ কেটে উপরের চোঁচা ফেলে ভেতরের লাল জলীয় অংশ কেটে খাওয়া হয়। তরমুজ শুধু ফল হিসেবে নয় জুস বা শরবত তৈরি করেও খাওয়া যায়।
অন্যান্য শরবতের মতো তরমুজের শরবত শরীরে পানির ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তরমুজের ভেতরের লাল অংশটি কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে শরবত তৈরি করা হয়। এই পানীয় শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সাথে যদি বরফ দেয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। শরীর মন জুড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
তরমুজ অন্য ফলের সাথে মিক্স করে শরবত তৈরি করে নিতে পারেন। এতে অন্যান্য ফলের গুনাগুন সহ তরমুজের গুনাগুন একসাথে যোগ হয়ে শরীরের অনেক উপকারে আসে।
তরমুজের বিচির গুনাগুন
তরমুজের বিচিতে রয়েছে জিংক, আয়রন, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এই উপাদানগুলি দেহের ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলে এবং অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়। আরো রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা অকাল বার্ধক্য রোধ করে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে। তরমুজের বিচি ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে থাকে।
তরমুজের বিচিতে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম এই উপাদানগুলি চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।
এতে রয়েছে মনো আনস্যাচুরেটেড ও পলি আনসিচুরেটেড ফ্যাটি এসিড যা খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তাছাড়াও এটি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তরমুজের বিচি খুবই উপকারী। তরমুজের দানায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমে সাহায্য করে যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধে তরমুজের বিচি অত্যন্ত কার্যকর।
তাছাড়াও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের প্রভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। অস্টিওপোরসিসের ঝুকি এড়াতে সাহায্য করে। মেটাবলিজম বাড়িয়ে তোলে যাতে কাজ করার এনার্জি বৃদ্ধি পায়।
তরমুজ খাওয়ায় সর্তকতা
লাল টকটকে রসালো তরমুজ দেখে জিভে জল আসলেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন
একদম লাল টকটকে রং দেখে তরমুজ নিবেন না। কারণ অনেক অসাধু ব্যবসায়ী তাতে ভেজাল রং মিশিয়ে দিতে পারে।
কাঁচা বা সবুজ কালারের তরমুজ না কেনাই ভালো কেননা এটি অপরিপক্ক অবস্থায় রয়েছে।
তরমুজ কেনার সময় এর ঘ্রাণে তারতম্য হলে কেনা থেকে বিরত থাকুন।
অনেক সময় কেমিক্যাল মিশিয়ে বিক্রি করার ফলে স্বাদের হেরফের হয় এমনটি বুঝলে একদম খাবেন না।
যদি দেখেন তরমুজের আশেপাশে কোন মাছি বসছে না সে ক্ষেত্রেও তরমুজ কেনা থেকে বিরত থাকুন কেননা পোকামাকড় বিষ মিশ্রিত ফলে কখনো বসে না।
শরবত বানাতে পানির বিষয়ে সতর্ক থাকুন অপরিষ্কার পানিতে শরবত বানাবেন না। রাতে পেটের পিড়া হতে পারে।
শরবতে অনেক সময় চিনি দেয়া হয় যা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। তাই শরবতে চিনি এড়িয়ে চলুন।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে ,তরমুজ অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। যা গরমে স্বস্তিদায়ক এবং স্বাস্থ্যকর। নিয়ম মেনে যদি এই ফলটি আমরা খাই তবে রোগপ্রতিরোধের পাশাপাশি এটি সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url