আমের আচার করতে পারেন না ,এভাবে করলে সবাই চেটেপুটে খাবে
আমের আচার কথাটি শুনলেই কেমন জিভে জল আসে। খেতে বেশ সুস্বাদু, বানানো অনেক সহজ।অনেকে আমের আচার ঠিকভাবে বানাতে পারেন না, বিশেষ করে নতুন গৃহিণীরা। তাদের জন্যই আমার আজকের এই প্রয়াস।
বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে আমের আচার করে থাকে। ফলে আচারের মধ্যে স্বাদের ভিন্নতা ও লক্ষ্য করা যায়। একেক জনের পছন্দ একেক রকম। কেউ পছন্দ করে টক আচার,কেউ মিষ্টি আচার, কেউবা আবার টক মিষ্টি ঝালের মিশ্রন।আমের ধরনঃ
নতুন গৃহিণীদের উদ্দেশ্যে বলছি,আমের আচার সব সময় কাঁচা আম দিয়ে করা হয়। পাকা আম দিয়ে আচার করার চিন্তা কখনই করবেন না। কোন আম হয় খুব টক, আর কোনটা হালকা মিষ্টি। আপনি যদি আমের টক আচার খেতে চান তবে অবশ্যই টক আম দিয়ে আচার করুন। হোক সেটা আমের কড়ালি দিয়ে অথবা আমের আঁটি সমেত।
আমের আচার সাধারণত বাংলা মাসের বৈশাখ জৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝিতে করা হয়। এ সময় আমের কড়ালী গুলো একটু একটু করে বড় হতে থাকে। বিভিন্ন কারণে এই সময়ে অনেক আম ,গাছ থেকে ঝরে পড়ে যায়। এই ঝরে পড়া আম গুলোই আমরা কুড়িয়ে নিয়ে অথবা বাজার থেকে সংগ্রহ করে আচার করতে পারি।
আরো পড়ুন : প্রতি সপ্তাহে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করুন
উপকরনঃ
বাঙালির অন্যান্য আচারের মতো, আমের আচার করার জন্য কতগুলো উপকরণ দরকার।যেমন-
কাঁচা আম
শুকনা মরিচ
পাঁচফোড়ন
গুড় অথবা চিনি
সরিষার তেল
আদা রসুন বাটা
গরম মসলা
ভাজা ধনিয়া বাটা
ভাজা জিরা বাটা
গরম মসলা
তেজপাতা
রসুনের কোয়া
সরিষা
লবণ
ভিনেগার বা সিরকা
আমের বিভিন্ন রকম আচার বানানো যায়। যেমন-টক ঝাল মিষ্টি আচার, আমের ঝুরি আচার, আচারিয়া আচার , চোঁচাসহ আচার ইত্যাদি।
টক ঝাল মিষ্টি আচারের প্রণালীঃ
প্রথমেই আমের খোসা ছাড়িয়ে নেব। পানিতে কয়েকবার ভালোমতো ধুয়ে নিয়ে পানি ঝরিয়ে নিব।এতে সামান্য পরিমাণ লবণ এবং হলুদ দিয়ে একটি পাত্রে ভাপ দিয়ে নেব। ভাব দেয়া হয়ে গেলে পাত্র থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নেব।এর পরে শুরু হবে আচার করার পরবর্তী ধাপ।
পাত্র চুলাতে গরম হয়ে গেলে সরিষার তেল ঢেলে দেবো। তেল গরম হয়ে গেলে একে একে অন্যান্য উপকরণগুলো দিতে থাকব।যেমন- শুকনো মরিচ, তেজপাতা এবং গরম মসলাগুলো দিয়ে রসুনের কোয়া গুলো কিছুক্ষণ ভেজে নেব। এরপরে আদা রসুন বাটা, সরিষা বাটা, পাঁচফোড়ন দিয়ে আরো কিছুক্ষণ ভেজে নিয়ে আম গুলো ঢেলে দেব।
আমগুলো কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে ভালোভাবে মসলার সাথে মিশিয়ে নিব। এরপরে এতে গুড় বা চিনি যোগ করব।তাতে করে মিশ্রণটি বেশ নরম বা পানি পানি হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পরপর এটি হালকা হাতে নাড়তে থাকতে হবে। এসময় চুলার আঁচ কমিয়ে রাখতে হবে যেন পুড়ে না যায়। এসময় এটি বেশ আঠাল হয়ে গেলে এতে সামান্য পরিমান ভিনেগার দিব।
এভাবে যখন আমের আচার ঘন রং ধারণ করবে এবং তেল উপরে উঠে এসেছে এমন অবস্থায় এর উপরে সামান্য পরিমাণ ধনিয়া এবং জিরার গুঁড়া ছড়িয়ে দিব। ব্যাস আমাদের আমের আচার কমপ্লিট। এই অবস্থায় আমের আচারটি ঠান্ডা হতে দিব। ঠান্ডা হয়ে গেলে পরিষ্কার শুকনো বয়মে আচার তোলার পরে , সরিষার তেল গরম করে নিয়ে ঠান্ডা হবার পরে এতে ঢেলে দেব।
ঝুরি আমের আচার
আটি যখন শক্ত হয়ে যায় সেই আম দিয়ে ঝুরি আচার ভালো হয়। আমের চোঁচা ফেলে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে আমের বিচি ফেলে বটিতে নিয়ে অথবা মেশিনে আম কুচি করে কুটে নিতে হবে। কূটা হয়ে গেলে এগুলো রোদে শুকাতে দিতে হবে।
ভালো করে শুকানোর পরে কড়াইয়ে তেল গরম করে আচারের সব উপকরণ দিয়ে নাড়তে হবে। যখন মিশ্রণটি আঠালো আকার ধারণ করবে এই অবস্থায় আমরা চুলা থেকে আচারটি নামিয়ে নেব। তেল গরম করে ঠান্ডা হয়ে গেলে সেটি আচারে ঢেলে দিব
চোঁচা সহ আচার
আমের ভিতরের বিচি ফেলে দিয়ে আম চোঁচা সহ ফালি ফালি করে কূটে নেব। দুই এক মিনিট গরম পানিতে ভাপ দিব । সম্ভব হলে রোদে শুকিয়ে নেব। রোদের ব্যবস্থা না থাকলে, টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিয়ে ফ্যানের নিচে রেখে দেবো কিছুক্ষণ। আম থেকে পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে, আচার করার জন্য তৈরি হয়ে গেল আম ।
কড়াই চুলার উপরে দিয়ে গরম করতে দিব
একটু বেশি পরিমাণে সরিষার তেল কড়াইয়ে ঢেলে দিয়ে গরম করে নেব
শুকনা মরিচ ,তেজপাতা, গরম মসলা দিয়ে দেব
রসুনের কোয়া গোটা অথবা থেতলে নিয়ে কিছুটা দিয়ে দেব
রসুনের রং লাল লাল হয়ে গেলে এতে আদা, রসুন পেস্ট দিয়ে দেব
মসলাগুলো কষানো হয়ে গেলে এতে পাঁচফোড়ন দিয়ে দেব
এতে আমগুলো ঢেলে দিবো
ভালো করে নাড়াচাড়া করে এতে গুড় বা চিনি দেব
টক আচার খেতে চাইলে চিনি বা গুড় দেয়ার প্রয়োজন নেই
চুলার আঁচ কমিয়ে রাখতে হবে যাতে পুড়ে না যায়
গুড়া ধনিয়া এবং জিরার গুড়া দিয়ে নামিয়ে নেব।
আচার সংরক্ষণের নিয়মঃ
আচার দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য কিছু নিয়ম মানলে অনেকদিন ভালো থাকবে।
আচার রান্না করার সময় ঢাকনা দেয়া যাবে না।
অল্প আঁচে ধীরে ধীরে ধৈর্য সহকারে রান্না করতে হবে।
আচার করার পরে কয়েকদিন রোদে দিতে হবে।
এতে ভিনেগার বা সিরকা দেয়া যেতে পারে।
আচারের পাত্রে কখনো ভেজা বা অপরিষ্কার চামচ দেয়া যাবে না।
সরিষার তেল গরম করে ঠান্ডা করার পরে পাত্রে দিতে হবে।
আচারের পাত্র মাঝে মাঝে রোদে দিতে হবে।
আমের আচার কেন করবঃ
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এত আচার থাকতে আমের আচার কেন করব? আমরা বাংলাদেশের মানুষ আম খেতে খুব পছন্দ করি। এটা হোক কাঁচা অথবা পাকা। আমাদের দেশে এখনো সারা বছর আম ধরে না। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আম পাওয়া যায়। যার ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমরা সারা বছর আম খেতে পারি না।
অন্যদিকে আমরা ভীষণ ভোজন রসিক । একাধিক ব্যঞ্জন ছাড়া আমাদের তৃপ্তি হয় না। পোলাও মাংসই হোক অথবা সাধারণ কোন খাবার ,শেষ পাতে কিন্তু একটু আচার চায়। সেটি যদি হয় আমের আচার তাহলে তো কোন কথাই নেই'। যাদের বহুমূত্র রোগ রয়েছে তাদের জন্য মিষ্টি খাওয়া নিষেধ। তারা চাইলেই মিষ্টি ছাড়া টক ঝাল আমের আচার তৈরি করে খেতে পারে।
স্বাস্থ্যকরঃ
আম মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে কাঁচা আম। আমের মধ্যে অনেকগুলো ভিটামিন বিদ্যমান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভিটামিন এ এবং সি। আম খেলে ভিটামিন এ এর অভাব অনেকাংশে পূরণ হয়। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। কাঁচা আম থেকে আচার করার ফলে এতে অনেক পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। যার শরীরের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
পরিশেষে বলতে পারি যে আমের আচার করা খুবই সহজ এবং এটি পুষ্টিগুনসমৃদ্ধ খাবার। মুখো রোচক তো বটেই। বর্ণিত নিয়ম অনুসারে যদি আমের আচার বানানো যায় তবে সেটি হবে খুবই সহজ ও তৃপ্তি দায়ক । বানানোর সাথে সাথে এটি সবাই চেটেপুটে খেয়ে শেষ করে দেয়। আমের আচার দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে খেতে পারেন নিশ্চিন্তে ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url